Skip to main content

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের ব্যবহার

Mejbah Ahammad

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয়। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ইসলামের আলোকে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং প্রযুক্তির সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে আমরা জীবনের অনেক ক্ষেত্রে উপকৃত হতে পারি, তবে এর অপব্যবহার থেকে বিরত থাকাও অত্যন্ত জরুরি।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইন্টারনেটের ইতিবাচক দিক:

  1. জ্ঞানার্জন: ইসলাম জ্ঞানার্জনের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা অনলাইনে ইসলামিক বই, কুরআন, হাদিস, এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারি। এটি আমাদের দ্বীনের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে এবং আল্লাহর পথে সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে সহায়ক।
  2. দাওয়াহ: ইন্টারনেট একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যার মাধ্যমে আমরা ইসলামের দাওয়াহ ছড়িয়ে দিতে পারি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইসলামিক ওয়েবসাইট এবং ইউটিউবের মাধ্যমে ইসলামিক বক্তৃতা, আলোচনা, এবং কুরআনের তাফসির শেয়ার করা সম্ভব, যা মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষদের কাছেও ইসলামের সঠিক বার্তা পৌঁছে দেয়।
  3. ইসলামিক শিক্ষা: অনেক ইসলামিক প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস এবং কোর্সের ব্যবস্থা করে, যা দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তে বসে ইসলামী শিক্ষার আলো গ্রহণ করার সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে আমরা ইলমের প্রচার করতে পারি এবং মানুষকে সৎ পথে চলার দীক্ষা দিতে পারি।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিক:

  1. অপব্যবহার: ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো প্রকারের অবৈধ কার্যক্রম বা অনৈতিক কনটেন্টে জড়িয়ে পড়া ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। আমরা যদি ইন্টারনেটকে নোংরা বিষয়বস্তু দেখার, গীবত বা মিথ্যা প্রচার করার জন্য ব্যবহার করি, তবে তা একেবারেই অনুচিত এবং শাস্তিযোগ্য।
  2. সময় নষ্ট: ইন্টারনেটে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে যদি আমরা আমাদের নামাজ, ইবাদত, বা দায়িত্বগুলোকে অবহেলা করি, তবে সেটিও ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। ইসলাম আমাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেয়।
  3. গোপনীয়তার লঙ্ঘন: ইসলামে মানুষের গোপনীয়তা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেটে যদি কারও ব্যক্তিগত বা সংরক্ষিত তথ্য চুরি করা বা অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে তা ইসলামিক নীতির লঙ্ঘন।

ইসলামের নির্দেশনা:

আমরা যদি ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির ব্যবহার করি, তবে আমাদের অবশ্যই নৈতিক দায়িত্ববোধ এবং ইসলামের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। ইসলাম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযমের নির্দেশ দেয়, তাই ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত:

  • সৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা: ইন্টারনেটের মাধ্যমে যদি আমরা সৎ কাজ করি এবং অন্যদের উপকারে আসি, তবে তা আমাদের জন্য সওয়াবের কাজ হতে পারে।
  • অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা: যেকোনো ধরনের অপব্যবহার যেমন অশ্লীলতা, মিথ্যাচার, এবং অপবাদ থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
  • সময় ব্যবস্থাপনা: ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে আমরা যেন আমাদের ইবাদত এবং অন্যান্য দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত না হই।

উপসংহার:

ইসলাম ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, তবে আমাদের অবশ্যই এর অপব্যবহার থেকে সাবধান থাকতে হবে। আমরা যদি ইসলামিক নীতিমালা মেনে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, ধর্মীয় চর্চা এবং সামাজিক কল্যাণের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।

সূত্র:

  1. Al-Qaradawi, Yusuf. "Islam and the Modern Technology." Islamic Foundation, 1998.
  2. Khan, Maulana Wahiduddin. "Islam and the Science." Goodword Books, 2002.
  3. Islamweb. "The Use of Internet in Islam." Islamweb.net, 2020.